Monday, April 16, 2012

কাঠ্‌পেন্‌সিল ঘটনাঃ পথশিশুদের অরিগামী

এবছর বইমেলা ২০১২ তে একরকম হঠাৎ করেই প্ল্যান হলো রাস্তার টোকাইদের নিয়ে কিছু করার, এবং যথারীতি আইডিয়াটা শহীদুল্লাহ্‌র মাথা থেকেই বেরুলো। আর সেটি হলো "পথশিশুদের জন্য অরিগামী" মার্কা কিছু একটা। একটু ভেঙ্গেই বলি... এটি হচ্ছে এক পাতার একটি অরিগামীর ইন্সট্রাকশন পেইজ, যেটি পরে সহজেই বানানো যাবে কাগজের শুয়োপোকা, কাঁকড়া বা অন্য কিছু। সব মিলিয়ে ৫টি ভিন্ন ভিন্ন অরিগামি পেইজ তৈরী করা হল। যে কেউ, যে পড়তে পারে বা স্রেফ ছবি দেখে বুঝতে পারে, সেই বানাতে পারবে ইন্সট্রাকশন মতো।

তাহলে পথশিশুরা এল কোত্থেকে? আসলে এই একপাতার ইন্সট্রাকশন পেইজটি কিছু পথশিশুকে অনেকগুলো করে দিয়ে দেয়া হবে, সাথে দেয়া হবে বানিয়ে ফেলা একটি অরিগামী। প্রতিটি ইন্সট্রাকশন পাতার নিচে লেখা আছে এর দাম ২ টাকা। যে এই পাতাগুলো পাচ্ছে, সে চাইলে পাতাগুলো ২ টাকা করে লোকজনের কাছে বিক্রি করতে পারে, অনেকটা ফুল বা তালপাতার খেলনা বিক্রির মতো। এতে অরিগামীর মত অত্যন্ত সৃজনশীল বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেও দেয়া যাবে, আবার পথশিশুদের কিছুটা আর্থিক উপকার ও হবে। আর যদি সেই শিশুটি কাগজগুলো বিক্রি না করে নিজে নিজেই অরিগামি বানানোর চেষ্টা করে, তাহলেও ক্ষতি নেই, একটু আনন্দ পাওয়া তো হলো!

ফলাফলঃ
যথারীতি বইমেলাতেই একদিন আমরা কয়েকজন (শহীদুল্লাহ, মিথুন, রিফাত এবং আরেক রিফাত) টোকাই খুঁজতে বেরোলাম, উদ্দেশ্য হাতে হাতে ইন্সট্রাকশন পেইজগুলো বিলি করে দেয়া। এবং অবাক হয়ে দেখলাম বইমেলা চত্বরে পথশিশুদের প্রবেশাধিকার নেই। যারা আছে তারা ডাব, পানি, ঝালমুড়ি ইত্যাদি বিক্রিতে ব্যাস্ত, দম ফেলার ফুস্‌রত ও নেই। বোঝাই যাচ্ছে বইমেলা চত্বরে তাদের ঢুকতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। যাই হোক তাদের ব্যাস্ততার দিকে তাকিয়ে আমাদের সাহসই হলোনা ওদেরকে অরিগামীর কথা বলার। অতঃপর টি এস সি যাত্রা। এখানে যে কয়জনকে পাওয়া গেলো তারা আরও ব্যাস্ত, সবাই কার কার যেন কি সব ফরমায়েশ খাটছে। অনেক খুঁজে দুটি অপেক্ষাকৃত অলস(কিছু একটা খেলছিলো) ছেলেকে পাওয়া গেলো। তাদেরকে কাজের কথা বলতেই উৎসাহের কমতি নেই... । কিন্তু যেই না আমরা তাদেরকে অরিগামির পাতাগুলো তাদের দেখালাম, তারা কিছুক্ষণ বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করলো, তারপর একরকম আমাদের চপেটাঘাত করার মত করে বলে দিলো, " এই ব্যাবসায় আমাগো পোষাইবো না"। আমরা কতক্ষণ বোকার মত "হে! হে!" করলাম, এবং বুঝলাম আপাততঃ এই প্রজেক্ট ফেইল। ফিরে এলাম উন্মাদ এর স্টলে, এসে দেখি মেহেদি এসে হাজির। তাকে জানানো হলো কি হয়েছে, শুনে সে-ও আরেকবার "হে!হে!" হাসি দিলো, তবে এটি বোকার হাসি না, আমাদের বোকামীর আর নাজেহাল হবার হাসি। সাথে এতো বয়স হয়ে যাবার পরেও যে আমাদের এখনো বাচ্চাসূলভ উৎসাহ আছে তার প্রতি কিছুটা প্রশ্রয়ের হাসি। যাই হোক, অপারেশন পথশিশুর অরিগামী আপাতত স্থগিত, তবে অবশ্যই বাতিল নয়। এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভারসিটির আর্কিটেকচারের ছেলেপেলেরা প্রতি শুক্র ও শনিবার পথশিশুদের নিয়ে একটি স্কুল চালায়, ইচ্ছে আছে সেখানে দ্বিতীয় দফা অপারেশন হবে। তারই সাফল্যের কামনা রইলো।

নিচে আমাদের তৈরী করা ৫ টি একপাতার অরিগামি ইন্সট্রাকশনগুলো জুঁড়ে দিলাম...


1 comments:

forhad said...

this is a test comment

Post a Comment

disclaimer